Thursday, August 14, 2025

শ্রেণী বিভক্ত জাতীয়তাবাদ: সমব্যাপী অন্তর্ভুক্তিকরণ ছাড়া জাঁকজমক ----ভারতের ৭৯তম স্বাধীনতা দিবস ও লোক দেখানো গর্বের রাজনীতি



ভারত তার ৭৯তম স্বাধীনতা দিবস পালন করছে। বারবার শোনা যায়আমরা "বিশ্বের সবচেয়ে বড়, মহান শক্তিশালী গণতন্ত্র" কিন্তু দেশপ্রেমের চকচকে আবরণের নিচে লুকিয়ে আছে এক বিশেষ অন্ধকারাচ্ছন্ন রাজনীতি; এই বড় দৃশ্যের পিছনে সত্যি কথা হলো বাহ্যিক জাঁকজমক নাগরিকের সাম্য অন্তর্ভুক্তিকরণকে হার মানিয়েছে, গণতন্ত্রের চেয়ে শোভা বড় হয়েছে, আর কোটি মানুষ এখনও দেশের প্রতিশ্রুতি থেকে বাদ পড়ে আছে। গণতন্ত্রের বদলে শুধু চোখে দেখার জন্য বড় অনুষ্ঠান। বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার "বিশ্বের সবচেয়ে বড়/উঁচু" অর্জনের কথা বলছেচেনাব সেতু থেকে স্ট্যাচু অফ ইউনিটি।

জম্মু-কাশ্মীরে চেনাব নদীর উপর বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু রেল সেতুর উদ্বোধন এই পরিবর্তনকে স্পষ্ট করে। স্বাধীনতা দিবসের নিমন্ত্রণপত্রে এই সেতুর ছবি যোগাযোগের চেয়ে শোভা বাড়ানোর জন্য বেশি। জনগণকে প্রশ্ন করতে বা অংশ নিতে বলা হয় না, শুধু তাকিয়ে থেকে আশ্চর্য হতে বলা হয়। গত এক দশকে ভারত "বিশ্বের সবচেয়ে বড়" প্রকল্পে ভরে গেছে—"স্ট্যাচু অফ ইউনিটি" থেকে শুরু করে বিশাল এক্সপ্রেসওয়েযেগুলো বড় অনুষ্ঠান মিডিয়ার হাইপে উদযাপিত হয়। এই প্রকল্পগুলোর আকারই মূল বার্তা, যা মানুষকে বিস্মিত করে রাজনৈতিক কথাবার্তাকে শক্তিশালী করে। 

কিন্তু এই জাঁকজমক অনেক সময় গভীর অসাম্যকে ঢেকে দেয়। "স্ট্যাচু অফ ইউনিটি" চকমকি করলেও, যেসব আদিবাসী এই প্রকল্পের জন্য জমি হারিয়েছেন, তারা প্রান্তে দাঁড়িয়ে দেখেন। এক্সপ্রেসওয়ে গ্রামের উপর দিয়ে চলে গেলেও, সেই গ্রামগুলোর মানুষ আজও পানীয় জল পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য অপেক্ষা করে। বাঁধ, স্টেডিয়াম বা মন্দিরের করিডোর দ্রুত গতিতে তৈরি হয়, কিন্তু পরিবেশের সুরক্ষা বা জনগণের মতামত উপেক্ষা করা হয়। এখানে উন্নয়ন জনগণের জন্য নয়, বরং তাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়। 

এটি কোনো দুর্ঘটনা নয়। বড় প্রকল্পগুলো ইতিহাসের একটি বিশেষ ন্যারেটিভকে জোর দিতে সাহায্য করে। উদাহরণস্বরূপ, মুকুন্দ তাঁর কলামে ("দ্য হিন্দু", ১২ আগস্ট ২০২৫) লিখেছেন—"কাশী বিশ্বনাথ করিডোর"-কে হিন্দু ঐতিহ্যের "সভ্যতার পুনরুদ্ধার" হিসেবে দেখানো হয়, যা ভারতের বহুত্ববাদী ইতিহাসকে প্রান্তিক (marginalize) করে তোলে । ফলে, এই জাতীয়তাবাদ শুধু আধিপত্য দেখায়, সম্পৃক্ততা বাড়ায় নাযেখানে সংখ্যালঘু বিকল্প ইতিহাস মুছে যায়। 

নিরাপত্তার কথাবার্তাও এই দর্শনীয় রাজনীতিকে শক্তিশালী করে। জুলাই মাসে গৃহমন্ত্রী অমিত শাহ সতর্ক করে বলেছেনভারতের "বাড়তি মর্যাদা" জাতীয় নিরাপত্তার জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসবে, তাই সংস্থাগুলোর মধ্যে জোরদার সমন্বয় দরকার। সতর্কতা জরুরি, কিন্তু ক্রমাগত "হুমকি" বুলি বড় প্রকল্প একসাথে চলতে থাকেশক্তি নিয়ন্ত্রণ দেখানো হয়, কিন্তু সমাজ অর্থনীতির অমীমাংসিত সমস্যাগুলো এড়িয়ে যাওয়া হয়। 

ভারতের নিজস্ব ঐতিহ্য অন্য রাস্তা দেখায়। প্রাচীন স্টেপওয়েল, মুঘল বাগান বা ঐতিহ্যবাহী সেচ পদ্ধতিএগুলোও প্রকৌশলের বিস্ময় ছিল, কিন্তু সেগুলো সরাসরি জনগণের কাজে লাগত, দৈনন্দিন জীবন উন্নত করত। অন্যদিকে, আজকের রেকর্ডভাঙা কাজগুলো শিরোনাম জেতার জন্য, মানুষের মন জেতার জন্য নয়। 

স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে এখন বুলেট ট্রেন, স্মার্ট সিটি মেগা প্রকল্পকে উন্নতির প্রমাণ হিসেবে দেখানো হয়। কিন্তু বেকারত্ব, কৃষক সংকট শিশু অপুষ্টির মতো বাস্তব সমস্যা খুব কম আলোচিত হয়। জাঁকজমক ভালো ছবি তোলে, কিন্তু লক্ষ মানুষ স্বাধীনতার প্রতিশ্রুতি থেকে বাদ পড়ে যায়। 

সত্যিকারের জাতীয় গর্বে, বহুত্ববাদী ভারতে সকল নাগরিকের অন্তর্ভুক্তিকরণকে ভয় পাওয়া উচিত নয়। মহত্ব মাপা হয় মূর্তির উচ্চতা বা সেতুর দৈর্ঘ্য দিয়ে নয়, বরং প্রতিটি নাগরিকের মর্যাদা, নিরাপত্তা অংশগ্রহণ দিয়ে। ভারতবর্ষে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন নাগরিকদের সামাজিক অন্তর্ভুক্তির জন্য একটি সুদৃঢ় সংস্কৃতি ছিল্, এখন তা হারিয়ে যাচ্ছে ভিন্ন ধর্ম-বিশ্বাসী সকল নাগরিকের সমান সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার, এবং বহুত্ববাদী সমাজে অন্তর্ভুক্তিকরণ হলো সরকারের এক দায়িত্ব  এই ১৫ই আগস্ট জাতীয় পতাকা উড়লে, প্রশ্ন থেকেই যায়ভারত কি দেশপ্রেমকে শুধু জাঁকজমকের সমান মনে করবে, নাকি এমন দেশ গড়বে যেখানে গর্বের বিষয় হবে সবার অংশীদারিত্ব সমান মর্যাদা সহ সকলের উন্নতিসাধন  

No comments:

Post a Comment

THE URGENCY OF INCLUSIVE CHRISTIAN EDUCATION IN INDIA: EMBRACING EVERY CHILD WITH COMPASSION AND COMMITMENT

                                       Introduction: The Cry for Inclusion In India today, the educational landscape is marked by deep ine...