যীশু খ্রীষ্ট, আমাদের পরিত্রাণের নিস্তার-পর্ব এবং এই পর্বের মুক্তিপণ-মেষশাবক, দুঃখভোগ করতে সক্ষম যিনি, মানবতার পোশাক পরিহিত যিনি, ঈশ্বরের দুঃখভোগকারী লোকদের জন্য তিনি নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন। তিনি আত্মা ও দেহের রোগব্যাধি জয় করেছিলেন। তিনি মানবজাতির ধ্বংসকারী – মৃত্যুকে– মারাত্মক আঘাত করেছিলেন । তাকে মেষশাবকের মতোই নিয়ে যাওয়া হয়েছিল; ভেড়ার মতো জবাই করা হয়েছে; পাঁঠার মত
বলি দেওয়া হয়েছে । নিজেই মুক্তিপণ হয়ে, তিনি মানবজাতিকে দাসত্ব থেকে পৃথিবীতে মুক্তি এনে দিয়েছেন; আমাদেরকে দাসত্ব থেকে মুক্ত করেছেন ; অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে এসেছেন । তিনি তাঁর আত্মা এবং রক্ত দিয়ে এক সীলমোহরে মানুষের আত্মাকে একহৃদে আবদ্ধ করে রেখেছেন । লজ্জায় মৃত্যুকে ঢেকে রেখেছেন। তিনি পাপকে আঘাত করেছেন এবং বংশধরদের পাপ-অন্যায় লুটিয়ে নিয়েছেন। মানবতাকে তিনি চিরকালের জন্য আপন করে নিয়েছেন। অনেক কিছু সহ্য করে সবার মধ্যে উপস্থিত থেকেছেন।
সার্ডিসের সাধু মেলিটো লিখেছেন : আবেলে তিনি নিহত হন, ইসাহাকে আবদ্ধ, যাকোবে অপরিচিত ও নির্বাসিত, যোষেফে বিক্রি ও মোশিতে অনাবৃত ও
মৃত্যুমুখি হতে হয়েছিল । তিনি নিস্তারপর্বের মেষশাবক হয়ে বলি হয়েছিলেন, দাউদে নির্যাতিত এবং প্রবক্তাদের মধ্যে অসম্মানিত হয়েছিলেন। তিনি এমন একজন মানুষ ছিলেন যাকে ‘গাছে’ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল; তাকে মাটিতে সমাহিত করা হয়েছে এবং তিনই মৃতূদের মধ্য থেকে পুনরুত্থিত হয়েছেন । এক নিঃশব্দধারী
নম্র মেষশাবক, এক নিহত মেষশাবক, –এই ঈশ্বরের মেষশাবককে পাল থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল; তাঁকে বলি দেওয়ার জন্য, মিথ্যা ভাবে, জোড়
করে, টেনে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল; শেষ-বিকেলে বলি দেওয়া হয়েছিল, সন্ধ্যার শুরুতে মারা গিয়েছিলেন এবং রাতে তাঁকে কবর দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাঁর কোনো হাড় ভাঙেনি, গুড়ো হয়নি; ক্ষতবিক্ষত হয়েও তাঁর শরীর ক্ষয় বলে কিছু জানে না। তিনি এখন পৃথিবীতে জীবিত ও সক্রিয়।
আমরা
প্রত্যক্ষ করি, রাজা
সলোমনের মতো
যীশুও একটা
গাধার
পিঠে
চড়ে
জেরূসালেম
নগরদ্বারে
প্রবেশ
করেন।
লোকেরা
দায়ূদের
রাজ্যের
উত্তরাধিকারী ও "ইস্রায়েলের রাজা, হোসান্না"
বলে
তাঁকে
অভিনন্দন জানায়। কিন্তু, যখন যীশু জেরুজালেমের মধ্যে প্রবেশ করবেন,
তখন
কিন্তু যীশুকে
কাঁটার মুকুট পড়িয়ে দেওয়া
হবে
এবং
ক্রুশ
থেকে
তিনি রাজত্ব করবেন – একদম সলোমনের বিপরীত!
এটাও
আমরা লক্ষ করে থাকি, যীশুর যন্ত্রনাময়ের সময়কালীন, শিষ্যরা
ব্যর্থ
হয়েছিল
এবং
যীশুকে
ত্যাগ
করেছিল।
গেৎশিমানী
উদ্যানে
শিষ্যেরা
বেশ
কয়েকবার
ঘুমিয়ে
পড়েছিল;
তারা জেগে থাকতে
পারেনি।
যীশু যখন
প্রার্থনা
করছিলেন
তখন
তারা
তাঁর
সঙ্গে
যায়নি।
যীশু
যখন
ধরা
পড়লেন
তখন
তারা
সৈন্যদের
কাছ
থেকে
পালিয়ে
গেল।
পিতর
কেবল দূর থেকে
পিছু
নেয়।
কিন্তু
সে তিন তিনবার যীশুকে
চেনার বা জানার কথা
অস্বীকার
করে।
পিতর বলে ওঠে,
“আমি ওই
লোকটিকে চিনিই না”।
ইহুদীদের মধ্যে যারা যীশুর
অলৌকিক
কাজগুলো
দেখেছিল
এবং
তাঁর
বাক্য
শুনেছিল,
তারা
যীশুকে পরিত্যাগ
করেছিল।
তারা
যীশুর পরিবর্তে
একজন
খুনি
দস্যুকে
মুক্তি
দিতে
বলেছিল।
যীশু
ক্রুশ
থেকে
চিৎকার
করে
বলে
ওঠেন, "ঈশ্বর আমার, ঈশ্বর
আমার,
কেন
তুমি
আমাকে
পরিত্যাগ করেছ?” যীশু যখন
শেষ
নিঃশ্বাস
ত্যাগ
করেন,
তখন
মহিলারাও
ক্রুশ
থেকে
অনেক
দূরে
ছিল।
বাকি
এগারো
জন
প্রেরিতের
মধ্যে
কেউই
পিলাতের কাছে
তাঁর
মৃতুদেহ চাইতে
আসেনি।
একমাত্র
আরিমাথিয়ার যোসেফই
তা
করতে সাহস পেয়েছিল। একমাত্র
পরজাতীয়
শতানিক
(সেঞ্চুরিয়ান)
জনসমক্ষে
সেই ক্রুশের তলায় যীশুকে
ঈশ্বরের
পুত্র
হিসাবে
তার
বিশ্বাস
স্বীকার
করেছিল।
যীশুর
প্রতিপাদনের
প্রমাণ হল এই :
"তাঁর
শিষ্যদের
দ্বারা
পরিত্যক্ত,
যুদাসের
দ্বারা
বিশ্বাসঘাতকতা,
পিতরের দ্বারা অস্বীকার,
যাজকদের
দ্বারা
ঈশ্বর-নিন্দার অভিযোগে
অভিযুক্ত,
একজন
হত্যাকারীর
পক্ষে
হওয়া এক জনতার
দ্বারা
প্রত্যাখ্যাত,
অন্ধকার
দ্বারা
পরিবেষ্টিত এক মহাসভা
এবং
রোমীয়
সৈন্যদের দ্বারা
উপহাসিত(যারা
যীশুকে
ক্রুশে
দিয়েছিল), এবং
আপাতদৃষ্টিতে
তাঁর
স্বয়ং ঈশ্বরের দ্বারা
পরিত্যক্ত। এই এক
মর্মাহত ঘটনার্থিক মুহূর্তে
যীশু
সম্পূর্ণরূপে
প্রতিপাদিত
হয়।
ঈশ্বর
মন্দিরকে
উপাসনার
স্থান
হিসাবে
প্রতিস্থাপন
করার পরিবর্তে, তার
জায়গায়
তাঁর
নিজের
পুত্রকে
উৎসর্গ
করে
যীশুর
আর্তনাদে সাড়া দিয়েছেন: এই
ঈশ্বর-পুত্র যীশুকে
অইহুদী
ও
ইহুদী
সকলেই একইরূপে স্বীকার করবে"
(রেমন্ড ব্রাউন, সুসমাচারে খ্রীষ্ট..., 163)।
আমরাও কি যীশুর কাছ থেকে পালিয়ে যাব?
মানব পরিত্রাণের জন্য মুক্তিপণ হয়ে উৎসর্গকৃত এই মেষশাবক-যীশুর যন্ত্রনায় সহমর্মি হয়ে, আমরাও কি প্রতিপাদিত
হব? সাক্ষীর প্রমাণ হব?
যীশুর
শিষ্য
হয়ে আমরাও কি
আমাদের
ক্রুশ
কাঁধে তুলে নিতে
প্রস্তুত?
খ্রীষ্টের
জন্য
এবং
গরীব-অভাবীদের জন্য
আমি
কীভাবে
দুঃখকষ্ট
এবং
আত্বত্যাগকে আলিঙ্গন
করতে
পারি?
আজ
আমাকে
কীভাবে
আমার
নিজের ক্রুশ তুলে
নেওয়ার
জন্য
ডাকা
হয়েছে? তার জন্য আমি কি উপায় বার করেছি?
No comments:
Post a Comment